একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য কী ব্যাকুল প্রতিক্ষা মানুষের।
কখন আসবে কবি?কখন আসবে কবি?
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুন ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা -
কে রোধে তাহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্য্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শুনালেন তাঁর অমর কবিতা খানি।
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম "।
আজ অগ্নী ঝরা ৭ই মার্চ।আজকের এই দিনে বাঙালির জাতীর স্বপ্নদ্রষ্টা হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের শাসকগোষ্টির শোষনের কাঁটাতার হতে নীরিহ বাঙালি জাতিকে রক্ষার জন্য এবং তাদের প্রকৃত অধিকার প্রাপ্তির জন্য বৈষম্য মূলক শাসনের বিরুদ্ধে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সহ্যরোয়ার্দী উদ্যানে বাঙালি জাতীর মুক্তির বার্তা প্রচার করেন।
পূর্ববাংলার মানুষদের সেই পরাধীন শাসনের শুরু থেকেই চেয়েছিল সত্যিকার স্বাধীকার এবং আলাদা একটি ভূখন্ড তা বৃটিশ শাসনাধীনে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে পেলেও হিন্দুতাবাদী আন্দোলনের মুখে নুয়ে পরে বাঙালি জাতীর স্বপ্ন ।
অতঃপর বৃটিশ শাসনের অবসানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান এবং আবারো পূর্ববাংলার জনগনের নতুন করে ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে,সেই সাথে পাকিস্তানের বৈষম্য মূলক শাসন ও নির্যাতনের স্বীকারে পরিনিত হয়।
পাকিস্তানের অবিচার মূলক শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনোর জন্য গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ(১৯৪৯)।এটিই ছিল পাকিস্তানের মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক বিরোধী দল।আওয়ামী মুসলীগের সদস্যবর্গের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান তাঁরই হাত ধরে পরর্বতী সময়ে মুসলীম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামিলীগ নামে নতুন যাত্রা শুরু করে।
যাইহোক বাঙালি জাতী পেয়ে গেল একটি রাজনৈতিক দল ও এক বলিষ্ট নেতৃত্ব।পশ্চিম পাকিস্তানের অপশাসনের বিরুদ্ধে ঘটেছে নানা সংগ্রাম ও প্রতিবাদ যেমন ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৫৬,১৯৬৬,১৯৬৮এবং১৯৬৯ এর গণভূথ্থান ও ১৯৭০ এর প্রাদেশিক নির্বাচন,এ নির্বাচনে আওয়ামীলিগ সংখ্যাগরিষ্ট পেয়ে ছিল এবং নিয়মনুযায়ী সরকার গঠনের অধীকার তাাদেরই ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্টি ক্ষমতা ছাড়তে রাজী ছিল না,নানা তালবাহানা শুরু করেন এবং তারা পূর্ববাংলার সাধারন মানুষদের অধীকার হরনে ছিলেন সচেষ্ট,,অসহায় বাঙালির ভাগ্যবিপর্যয় রোধে মহান নেতা এর ত্রীব্র প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তান শাসকগোষ্টির বিরুদ্ধে। যার ফলশ্রুতিতেই ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালের অগ্নীঝরা ভাষণ যা বাঙালিজাতীর মুক্তির পথকে খুলে দিয়েছিল।
আসুন আমরা এই ভাষনের সংক্ষিপ্ত পটভুমি জানার চেষ্টা করি -
১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ দ্বিতীয়বার সামরিক শাসন জারির মাাধ্যমে স্বৈরাচারী আইয়ুব শাসনের অবসান ঘটে।তদস্থলে প্রধান সেনাপতি জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়াখান পাকিস্তানের প্রধান সামরিক প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বায়িত্বভার গ্রহন করেন।ক্ষমতা গ্রহনের পরপরই ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ অক্টবর জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের দিন ঘোষনা করেন।ইতোমধ্যে পূর্ববাংলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় অক্টবরে নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পরে।যাইহোক অবশেষে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের এবং ১৯ ডিসেম্বর প্রাদেশিক নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করে ১ জানুয়ারি থেকে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবংসভাসমিতি করার অধিকার আদেশ জারি করে।
১৯৭০ সাালের ৭ ডিসেম্বর বাঙালিজাতি তথা পাকিস্তানের চরম ভাগ্য পরীক্ষার দিন।এই দিনেই অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তানের জাতীয়পরিষদের নির্বাচন। আওয়ামিলীগ সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে।জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লিগ ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং প্রাদেশিক পরিষদে ২৮৮ টি আসন লাভ করে।
আওয়ামী লিগের বিপুল বিজয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রি বলে অভিহিত করলে বাঙালিদের ক্ষমতা গ্রহনের ভবিষৎ দুশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব হয়। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ ধার্য করা হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদী নেতাদের পরামর্শে ইয়হিয়া খানের মতিভ্রম ঘটে এবং ১ মার্চ একটি ঘোষনার মাধ্যমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধঘোষনা করেন।
সংখ্যাগরিষ্ট দলের সঙ্গে কোনরুপ আলোচনা না করে অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়ায় বাঙালি জনগন অত্যান্ত অসন্তুষ্ট ও বিক্ষুব্দ হয়ে পরে।
ইয়াহিয়া খানের হটকারিতার প্রতিবাদে ৭ মার্চের রেসর্কোসের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জাাতির উদ্দেশে সর্বকালের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ট ভাষন প্রদান করেন।যা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বীয় ঐতিহ্য উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।।
তিনি ঘোষনা করেনঃ-"আর যদি একটা গুলি চলে,আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়,তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল।তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু- আমি যদি হকুম দিবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে দিবে।আমরা ভাতে মারবো ,আমরা পানিতে মারবো।তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো,কেউ তোমাদের কিছু বলবে না।কিন্তু আর আমার বুকের উপর গুলি চালাবার চেষ্টা করোনা ভাল হবে না।সাত কোটি মানুষ কে দাবায়া রাখতে পারবেনা।আমরা যখন মরতে শিখেছি এখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবেনা।"(অংশবিশেষ)।
তিনি আরো ঘোষনা করেন "রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিব,দেশকে মুক্ত করে ছারবো ইনশাল্লাহ্ "
৭ মার্চের উদাত্ত আহ্বানের ফলে অসহযোগ আন্দলোন ত্রীব্র আকার ধারন করে এবং চারদিকে স্বাধীনতার স্লোগানে দেশ মুখরিত হয়ে ওঠে।একটি সার্বভৌম দেশের মধ্যে আর একটি স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়।কাজেই ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষন ছিল স্বাধীনতার একটি মাইল ফলক।এ ভাষন বাঙালি জাতিকে চির গৌরবের আসনে অধিষ্টিত করেছে।
অথচ অতি দুুঃখের বিষয় এই ভাষন বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল,এদেশের ইতিহাস কে বিকৃতি করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল।কিন্তু তা সম্ভব হয়নী।
বরং পেয়েছে নতুন রুপ ৩০ অক্টোবর ২০১৭ UNESCO কর্তৃক "বিশ্ব প্রমাণ্য ঐতিহ্য" স্বীকৃতি।
তাই আজ আবারও স্বরন করছি আমাদের মহান নেতাকে কবির ভাষায়ঃ
"যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা
রক্ত গঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয়,হবে হবে জয়
জয় শেখ মুজিবর রহমান।"
,,, মোঃ আল-আমিন শেখ,,,,
প্রভাষক (ইতিহাস বিভাগ)
দুর্গাহাটা ডিগ্রি কলেজ,
গাবতলী ,বগুড়া।
0 Comments:
Post a Comment