আমাদের বিজয়ের গল্প

আমাদের বিজয়ের গল্প 

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত
বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে,
প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে,
মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও।
১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের এক স্বরনীয় ঘটনা। এই মুক্তিযুদ্ধে একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনেন। নিজেদের অধিকার কে ছিনিয়ে আনার জন্য,দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে স্বাধীন করার জন্য বাঙ্গালি জাতি যে বিরল আত্মত্যাগের পরিচয় দেন তাতে সত্যিই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ও সামাজিক জীবনের একটি গৌরবের অধ্যায়ের স্থান অধিকার করে আছে।
আজ ঐতিহাসিক ১৬ ই ডিসেম্বর, আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন,তাই শুরুতেই স্বরন করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির দূত,স্বাধীন বাংলার প্রতিষ্টাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে, স্বরন করছি সেই সব শহিদদের যাদের তাজা প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আজকের এই বিজয়ের গৌরবময় ইতিহাস, স্বরন করছি সেই সব মা- বোনদের যারা তাদের সতীত্ব নামক অমূল্য সম্পদ বির্সজন দিয়েছিলেন এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য, কল্যাণের জন্য।

আজ ৪৯ তম মহান বিজয় দিবস এবং আমদের মুক্তির দিন। আমাদের জানা উচিত যে, আমরা ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর পরাজয় স্বীকার ও আত্মসমর্পন মধ্যেদিয়ে আমারা যে স্বাধীনতা পেয়েছি, আজকের এই দিন প্রকৃত পক্ষে শুধুমাত্র নয় মাসের যুদ্ধের ফসল নয়।
স্বাধীনতার যে আকাঙ্ক্ষা,স্বাধীনতার যে প্রত্যাশা এটা কিন্তু বাঙ্গালী জাতির হৃদয়ে অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। তাই আমাদের একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে,এই জন্য যে, আজকের এই দিনটিতে আসার জন্য বাঙ্গালি জাতিকে কতটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাঙ্গালী জাতি হিসাবে আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়,বাঙালি জাতি একমাত্র জাতি যে জাতির নামের আগে নীরিহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের আর কোন জাতি নাই, যে তাদের জাতির নামের আগে নীরিহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। তাই আমি বলতে চাই আজ যারা নতুন প্রজন্ম আছো তোমাদের জানা দরকার বাঙ্গালি জাতি একদিনে বাঙ্গালি হয়ে ওঠেনি,পিছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ওইতিহ্য। আমরা বাঙ্গালিরা যুদ্ধ বিগ্রহ বুঝতাম না, শুধু জানতাম কিভাবে দু-বেলা দু-মুঠো খাবার ব্যবস্থা করা যায়,আর একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন । আর এই কারনেই যখন যে জাতি পেরেছে তখন সেই জাতিই আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে হামলা করেছে। খর্ব করেছে বাঙ্গালির ইতিহাসকে। সেই মৌর্য বল,তুর্কি বল, বল মুঘল,আফগান সবাই আমাদের শাষন করেছে,করেছে শোষণ।  আর রাক্ষসের মত গ্রাস করে নিয়েছিল ইংরেজরা। তারা দুইশত বছর শোষণ করে বিদায় বেলায় বাংলাকে নতুন করে পরাধীনতার অগ্নি শিকলে বেঁধে যান, কেননা ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা আইনের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলেও পূর্ব বাংলার মানুষের বহুদিনের স্বাধীন ভূ-খণ্ডের ইচ্ছা থাকলেও পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে শেষ পর্যন্ত ব্যার্থ হয়ে পরে এবং বাঙ্গালিদের আবারো মেনে নিতে হয় পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর জুলম শাসন ব্যবস্থাকে। ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস আমাদের দীর্ঘ ২৩ টা বছর পশ্চিমাদের অন্যায় এবং বৈষম্যমূলক শাসন ব্যবস্থাকে মেনে নিতে হয়েছিল । 
বাঙ্গালী জাতি শুধু মাত্র ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করিনি পাকিস্তানের সঙ্গে, বরং পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই পূর্ব বাংলার প্রতি তাদের যে অবহেলা বৈষম্য তৈরি করেছিল, সেটা কিন্তু শুরু থেকেই নানা ভাবে প্রতিবাদ করে আসছিল বাঙ্গালিরা। আমাদের মনে রাখাতে হবে স্বাধীনতা হঠাৎ পাওয়া কোন সম্পদ নয়, এটা অনেক দিনের ধারাবাহিতার ফসল। আর সেই ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার নতুন করে বীজ বপন করেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে।আমরা জানি পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী স্বার্থের বৈষম্যর সাথে সাথে এদেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বৈষম্য তৈরির চেষ্টা করেছিল এবং সেই বৈষম্যর প্রথম দেওয়াল বাঙ্গালী জাতি জীবন দিয়ে ভেংগে চুরমার করে দিয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠা করেছিল মাতৃভাষা বাংলাকে। তাই আমরা বলতে পারি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানি দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার প্রথম হাতে খড়ি। আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় জাতীয় ভাষা মেনে নিতে বাধ্য হন। বাঙ্গালী জাতি ও বুঝতে পারেন আন্দোলন ও প্রতিবাদের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে নিজের অধিকার রক্ষা করা যায়। তাই নতুন করে বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতার নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখতে থাকেন- তারি ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪,১৯৫৬,১৯৫৮,১৯৬২ তে মুক্তি সংগ্রামকে করেছে তীব্র থেকে তীব্রতর।
আমরা জানি যে, ১৯৫৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বিভিন্ন কায়দায় বাঙ্গালী জাতিকে শোষণ করেন,বিশেষ করে ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর যুদ্ধে বাঙ্গালী সৈনিকেরা তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখে। অথচ যুদ্ধের পর পাকিস্তানে অর্থাভাব দেখা দিলে পূর্ব পাকিস্তানে কোন প্রকার নজর দেন নি, বরং অতিরিক্ত চাহিদা মেটানোর জন্য বাঙ্গালিদের উপর মোটা অংকের করের বোঝা চাপিয়ে দেন।
এইসব অনিয়ম আর বৈষম্যর রোষানলে বাঙ্গালি জাতি যখন দিশে হারা তখন বাঙ্গালির প্রাণের নেতা শেখ মুজিব রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙ্গালী জনতার অধিকার সমল্লিত দাবি নিয়ে পাকিস্তানের লাহোরে বিরোধী দলের এক জনসভায় ছয়দফা দাবি উপস্থাপন করেন, যা ইতিহাসে ১৯৬৬ সালের ছয়দফা নামে পরিচিত। এই ছয়দফা ছিল মুলত বাঙ্গালী জাতির অধিকার আদায়ের দাবি এবং মুক্তির সনদ,তাই এটাকে ইংল্যান্ডের ম্যগনাকার্টার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ছয় দফা ঘোষণা হওয়ার পর বাঙ্গালী জনতা এটা রক্ষার জন্য শেখ মুজিবের সাথে একাত্বতা করে নিজেদের সংঘটিত করতে থাকে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ভীত হয়ে ছয় দফাকে এবং ছয়দফাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন কে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা করতে থাকে। আর এদিকে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সনদ ঠিক রাখার জন্য শেখ মুজিবর রহমান দেশী বিদেশি নেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে থাকেন। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী মুজিব কে ঠেকানোর জন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৮ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার নাম করে শেখ মুজিব সহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে “রাষ্ট্র বনাম শেখমুজিব ও অন্যান্য নামে মামলা দায়ের করেন । এই মামলা আগরতলা মামলা নামেও পরিচিত। আগরতলা মামলা মূলত দায়ের করা হয় এই ভেবে কোনভাবেই যেন ছয়দফা সফল হতে না পারে। কিন্তু মুজিব কে গ্রেফতার করা হলে এই আন্দোলন আরও জোরালো হয়ে ওঠে। বিশেষ করে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র নেতা আসাদকে ২০ জানুয়ারি, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী গুলি করে হত্যা করে এবং এই মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে বিচারের নামে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে গুলি করে হত্যা করে ও ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডঃ শামসুজ্জহাকেও হত্যা করে। এই সমস্ত হত্যার প্রতিবাদ এবং বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দেশব্যাপি শুরু হয় প্রচণ্ড গণ আন্দোলন। ভয়াভহ অবস্থার প্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং শেখ মুজিব কে মুক্তি দেয়। ঢাকার ছাত্র জনতা ২৩ ফেব্রুয়ারি,১৯৬৯ সালে শেখ মুজিব কে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান করে। ২৪ মার্চ, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন। ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন এবং এর সাথেই বাঙ্গালির মুক্তির আন্দোলনে চূড়ান্ত দিকে ধাপিত হয়।
২৫ মার্চ, ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় বার সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর ইয়াহিয়া খান পূর্বের আইয়ুব  খানের স্বৈরাচারী ভাবধারাকে জনগণের আড়ালে নেওয়ার জন্য পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রদান করেন এবং ১৯৭০ সালের ৫ অক্টবর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। কিন্তু পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়, ফলে অক্টবরে নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পরে।
৭ ডিসেম্বর, ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের এবং ১৭ জানুয়ারি প্রাদেশিক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
৭ ডিসেম্বর ছিল পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর ভাগ্য পরীক্ষার দিন। বাঙ্গালী জনতা জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবের দলকে নিরুঙ্কুশ ভাবে জয় লাভে সাহায্য করে। পুর্ব বাংলায় ১৬৯ টি আসনের মধ্যে আওয়ামিলীগ ১৬৭ টি আসন লাভ করে বিজয়ী ঘোষণা করেন। এই নির্বাচনের ফলাফল কে মেনে নিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী বলে অভিহিত করেন। এতে করে বাঙ্গালিদের ক্ষমতা গ্রহণের ভবিষৎ দুঃশ্চিন্তা কিছুটা লাঘব হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকায় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ধার্য করেন। এই ঘোষণায় বাঙ্গালী জাতি কিছুটা আশান্বিত হয়।
পাকিস্থানের শাসক গোষ্ঠীর কায়েমি স্বার্থবাদী নেতাদের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মতিভ্রম ঘটে এবং শুরু হয় ষড়যন্ত্র। ১ মার্চ কোন প্রকার পরার্মশ ছারাই অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা কররেন। শেখ মুজিবের আহ্বানে ২ ও ৩ মার্চ সারাদেশে শান্তিপূর্ন হরতাল পালিত হয়। কিন্তু তারপরও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী শান্তিপূর্ন মিছিলে গুলি চালায়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর লোক হতাহত হয়। সামরিক বাহিনীর এই পৈচাশিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঢাকার পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহূত জনসভায় বঙ্গবন্ধু স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এরূপ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহিয়া খান ৬ মার্চ- এক বেতার ভাষনে ২৫ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনের তারিখ পুনরায় ঘোষণা করেন।
বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খানের হটকারিতা বুঝতে পেরে তার প্রতিবাদে ৭ মার্চ রেসকোর্সের বিশাল জনসভায় জাতির উদ্দেশ্য সর্বকালের ইতিহাসের সর্ব শ্রেষ্ট ভাষন প্রদান করেন। যা বাঙ্গালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে স্বীয় ঐতিহ্যের উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।
তিনি ঘোষণা করেছিলেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দিব, দেশকে মুক্ত করে ছারব ইনশাল্লাহ। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙ্গালি জাতিকে মুক্ত সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে ছিল।
পাকিস্তানি সরকার বৈঠকের নামে বঙ্গবন্ধুর সাথে এবং বাঙ্গালি জাতির সংগে নানা টালবাহানা শুরু করেন। শুধু তাই নয় টালবাহানার নাম করে সময়ের কাল্কষেপ্ন করে চুপি চুপি পাকিস্তান থেকে সৈন্য বাহিনী নিয়ে আসতে থাকেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট( বাঙ্গালি নিধন অভিযানের সাংকেতিক নাম) –এ স্বাক্ষর করে এবং বঙ্গবন্ধু কে গ্রেপ্তারের পরোয়ানা জারি করে পাকিস্তানে চলে যান।
২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে এদেশের নিরীহ নিরাস্র বাঙ্গালির উপর বর্বর নির্যাতন চালায় পাকহানাদার বাহিনী। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ( ২৫ মার্চ ১২টার পর) বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি ঘোষণাটি দিয়েছিলেন ইংরেজিতে যাতে করে বিশ্ববাসি ঘোষণাটি বুঝতে পারে। ঘোষণার বাংলা অনুবাদ ছিল- “ইহায় হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে,যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাড়াঁও,সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ কর। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চুড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।
স্বাধীনতার এই ঘোষণা বার্তাটি দ্রুতগতিতে বাংলাদেশের সকল স্থানে তৎকালীন ইপি-আর-এর ট্রান্সমিটার, টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রচার করে এবং বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেওয়া হয়। অতঃপর আওয়ামীলীগের তৎকালীন চট্রগ্রামের সভাপতি এম এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি পাঠ করেন এবং ২৭ মার্চ চট্রগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবার পাঠ করেন।
স্বাধীনতার ঘোষণার পর সকল শ্রেনীর জনগোষ্ঠী স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরে।দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পরে আজকের এই দিনে বাঙ্গালি জাতি ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা।বিশ্বমানচিত্রে জায়গা করে নেয় আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিল তা অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা পাইনি বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে । তাই সবার প্রতি আহ্বান থাকবে সব বিভেদ ভুলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য আসুন একতাবদ্ধ হয়ে দেশের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিছু করার চেষ্টা করি। একজন আর্দশ নাগরিক হিসাবে দেশের প্রতি সকলের  দ্বায়িত্ব রয়েছে।
এ দেশ একার নয়তো তোমার
নয়তো একা আমার।
এ দেশ হ’ল সব বাঙ্গালীর
জেলে, কৃষক, কামার।
নাপিত, মুচি, ধনি-গরীব
সবার এ দেশ ভাই।
এসো এবার সবাই মিলে
দেশ টাকে সাজাই।
মোঃ আল-আমিন শেখ (প্রভাষক) ইতিহাস বিভাগ। দুর্গাহাটা ডিগ্রি কলেজ, গাবতলী, বগুড়া।

0 Comments:

Post a Comment